মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে। আমেরিকার একচ্ছত্র প্রভাবের বাইরে গিয়ে সামনে চলে এসেছে চীন। তাদের মধ্যস্থতায় মধ্যপ্রাচ্যে বইছে শান্তির সুবাতাস। সৌদি-ইরানের মধ্যে সম্পর্ক পুন:প্রতিষ্ঠা, সৌদি ইয়ামেন দ্বন্দ্ব কমানোর পর এবার ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যেও শান্তি আলোচনা করবে বেইজিং। একে মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর রাজনৈতিকসহ নানা ক্ষেত্রে একক প্রভাব বজায় রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এতে আরব উপদ্বীপের দেশগুলোর মধ্যে শত্রুতা বেড়েছে, ভেঙ্গেছে নিজেদের কূটনৈতিক সম্পর্ক। তবে সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে অনুঘটক হয়ে উঠেছে চীন।

চীনের মধ্যস্থতায় দীর্ঘ সাত বছর ধরে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে স্থগিত থাকা কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় চালু হতে যাচ্ছে। এতে দুই দেশের মধ্যে আবার বাণিজ্য এবং নিরাপত্তা সহযোগিতার পাশাপাশি দূতাবাস চালু হবে বলেও জানা গেছে। বেইজিংয়ের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব ও ইরানের দীর্ঘদিনের বৈরিতার অবসানের বড় সাফল্য দেখা গেছে।

এরই ধারাবাহিকতায় ইয়েমেনে দীর্ঘ ৮ বছর চলা গৃহযুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে চলতি মাসে রাজধানী সানায় আলোচনায় বসেছিলো সৌদি আরবের একটি প্রতিনিধি দল। ২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেনের সরকারি বাহিনী ও হুতি বিদ্রোহীদের মধ্যে ছায়াযুদ্ধে লিপ্ত ছিলো সৌদি আরব ও ইরান। এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের ফলশ্র“তিতে প্রায় ৯০০ বন্দি বিনিময় করেছে সৌদি ও হুতি বিদ্রোহীরা।

মূলত রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ দিনের প্রভাবে ভাটা পড়ে। বলতে গেলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আর সৌদি আরবের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্কের অবনতির সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে চীন। পশ্চিমের দেশগুলোর মতো মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন নিয়ে বড় বড় শর্ত না দিয়ে শুধু অর্থনৈতিক সহযোগিতার দিকে গুরুত্ব দিয়েছে তারা।

সবশেষ ইসরাইল ও ফিলিস্তিনির মধ্যে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে চীন। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি ইরান ও সৌদি আরব তাদের প্রতিশ্রুতি অনুসরণ করে, তা অন্যান্য আঞ্চলিক সংঘাত নিরসনেও সহায়তা করবে। তাছাড়া এ সমঝোতা লেবাননের বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে চাঙা করার পাশাপাশি ইরাক ও সিরিয়ার জন্য সুবিধা বয়ে নিয়ে আসতে পারে বলে আশা করছে বিশ্লেষকরা।